সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ফার্ম থেকে কয়েক’শ গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ নিয়ে গেছে গ্রামবাসী

নিউজ ডেস্ক।।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যাপক লুটপাট চলে ঢাকার ধামরাইয়ের এসএস অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে। টানা তিন দিন ধরে চলা লুটপাটে কয়েক শ লোক অংশ নেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির কয়েক শ গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, পাখি, হাঁস, মাছ, বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রসহ প্রায় ৩০ কোটি টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায়।

এসএস অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের মালিক সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।

অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে কুল্লা ইউনিয়নের বড়াকৈ এলাকায় কয়েক একর জমিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। এর পর বছর বছর এর পরিধি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ তিন শতাধিক একর জমি জুড়ে ছিল গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাঁস ও হরিণের খামারসহ মাছ চাষের পুকুর আর লেক। বিভিন্ন সবজিসহ ফসলের আবাদও হয় প্রতিষ্ঠানটিতে।

প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা কর্মী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত সোমবার রাত ১১টার পর পাঁচ শতাধিক লোক আমাদের অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। তাঁরা মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে রাতেই নয়টি শেডে থাকা ২৫০টি গাভি আর ৩০০টি ষাঁড়, বাছুরসহ ৫০টি মহিষ লুট করে নিয়ে যায়।’

সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘পরের দুই দিন মঙ্গল ও বুধবার প্রায় তিন হাজার লোক আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দুই শতাধিক হরিণ, তিন শতাধিক ছাগল, শতাধিক দুম্বা, দুই শতাধিক ভেড়া ও গাড়ল, দুই শতাধিক রাজ হাঁস এবং ৫০টি ময়ূর লুট করে নিয়ে যায়। তারা ২৮টি পুকুর ও কয়েকটি লেক থেকে অন্তত ৫০০ মণ মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এসব মাছের অধিকাংশই রুই, কাতল ও চিতল। যার প্রতিটির ওজন পাঁচ থেকে আট কেজি।’

এ ছাড়া ধান কাটার হারভেস্টর মেশিন, একটি পিকআপ, দুটি জেনারেটর, অন্তত পাঁচটি এসি, দুটি ট্রাক্টর, দুধ প্যাকেট করার মেশিন, একটি রাইস মিলের যন্ত্রাংশ, ১০টি গভীর নলকূপের মোটর ও গরু-ছাগলের শেডের টিনসহ একটি বাংলো বাড়ি ও এক দ্বিতীয় তলা ভবনের জানালা, দরজা এবং ভবনে থাকা অন্যান্য মালামাল লুটে নিয়ে যায়।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে ২৫০টি গাভি থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এসব দুধ প্যাকেট করে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করা হতো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন নিরাপত্তা কর্মী বলেন, ভয়ে ছোটাছুটি করার কারণে লুটপাটে অংশ নেওয়া লোকজন হরিণ ধরতে পারছিলেন না। পরে তাঁদের কাছে থাকা অন্তত ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে হরিণ মেরে ব্যাগে ভরে নিয়ে গেছে। লুটপাটে অংশ নেওয়া লোকজনের প্রায় সকলেই আশপাশের এলাকার বাসিন্দা বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লুটে অংশ নেওয়া নেওয়া লোকজনের অধিকাংশই স্থানীয় কুল্লা ও রোয়াইল ইউনিয়নসহ পাশের জেলা মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার লোকজন। অনেকে সাভার থেকেও এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, এলাকার কিছু লোক লুটপাটকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় আর তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে যায়নি।

এসএস অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম বলেন, ‘লুটপাটকারীরা কিছু রেখে যায়নি। তারা সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রাণী, মাছ ও মালামাল লুটে নিয়ে গেছে। এর পরও দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page